• শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন

সন্তানের স্বীকৃতি পেতে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঘুরছেন মা শাহিনুর বেগম

Reporter Name / ১০ Time View
Update : সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫

 ইয়াসিন আরাফাত আবির রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ছোট্ট শিশু শাহাদাত এখনো জানে না, কেন তার বাবা তাকে মেনে নেয় না। স্কুলে বন্ধুরা যখন বাবার নাম লেখে, তখন শাহাদাত চুপ করে থাকে। চোখ নামিয়ে ফেলে মাটির দিকে। কারণ—তার বাবার নামটা এখনো কাগজে লেখা হয়নি।
মা শাহিনুর বেগম এই এক টুকরো পরিচয়ের স্বীকৃতি পেতে বছর বছর ধরে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু ন্যায়বিচার যেন অধরাই থেকে গেছে।
রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের বংশীব্রীজ এলাকার আইয়ুব আলীর মেয়ে শাহিনুর বেগমের জীবনে বঞ্চনার শুরু ছোটবেলায়। মাত্র ১০ বছর বয়সে তাকে চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক মাস পরেই সে সংসার ভেঙে ফিরে আসে বাবার বাড়িতে।
পরে জীবিকার তাগিদে কাজ নিতে হয় রায়পুর পৌরসভার নতুনবাজার এলাকার এক বাসায়। সেখানে পরিচয় ঘটে আব্বাস উদ্দীন রতনের সঙ্গে—স্থানীয় কৃষি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। শুরুতে সহানুভূতির মুখোশে থাকা মানুষটি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন শাহিনুরের দুর্ভাগ্যের কারিগর।
শাহিনুরের অভিযোগ, রতন তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে গোপনে বিয়ে করেন এক মসজিদের ইমামের মাধ্যমে, কিন্তু কাবিন করেননি। কিছুদিন পর গর্ভবতী হয়ে পড়লে সবকিছু প্রকাশ্যে আসে। তখনই রতন সম্পর্ক অস্বীকার করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট জন্ম নেয় তাদের ছেলে শাহাদাত। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সে শুধু মায়ের সঙ্গেই বড় হচ্ছে—বাবার নাম ছাড়াই।
২০২১ সালে শাহিনুর রতনের বিরুদ্ধে পিতৃত্ব স্বীকৃতি ও ভরণপোষণের দাবি নিয়ে আদালতে মামলা করেন। আদালত ডিএনএ টেস্টের নির্দেশও দেন। কিন্তু রতন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের সহায়তায় চাপ সৃষ্টি করে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ শাহিনুরের।
তাকে কিছু টাকা দিয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল—“সন্তানকে মেনে নেব, প্রতি মাসে খরচ দেব।” কিন্তু মামলা প্রত্যাহারের পর আর কোনো খোঁজ রাখেননি তিনি।
বর্তমানে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটোয়ারী বলেন, “ডিএনএ টেস্টই সত্য উদঘাটনের একমাত্র পথ। আদালত একবার অনুমতি দিলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আজ শাহাদাতের বয়স ১১ বছর। মায়ের কোলে বড় হচ্ছে, কিন্তু বাবার পরিচয় এখনো অজানা। সমাজের চোখে সে ‘অস্বীকৃত সন্তান’ হলেও, মায়ের চোখে সে-ই তার পৃথিবী।
শাহিনুর বলেন, “আমার সন্তান শুধু তার বাবার নামটা পেতে চায়। আমি চাই না টাকার বিচার, শুধু চায়—সে যেন বলে, ‘এই আমার ছেলে।’”
অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দীন রতন বলেন, “শাহিনুর আমার বাসার গৃহকর্মী ছিলেন। স্থানীয় কিছু মানুষ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি নির্দোষ—প্রমাণ করব আদালতেই।”
রায়পুরের এই গল্পটা কেবল এক নারী ও তার সন্তানের নয়; এটি সমাজের সেই নীরব সত্য, যেখানে প্রভাবশালী পুরুষেরা দায় এড়িয়ে যায়, আর সাধারণ নারীরা ন্যায়বিচারের আশায় বছরের পর বছর ঘুরে বেড়ায়।
ছোট্ট শাহাদাতের প্রশ্নটা আজও অনুত্তরিত—“আমার বাবার নামটা কেন লিখতে পারি না


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category