• মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
Headline
মুরাদনগরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে স্ত্রী খুন পাঁচবিবিতে আদিবাসী শিশুদের মাঝে বড়দিনর উপহার  সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পাশে পাঁচবিবি রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন কুড়িগ্রামের ২ সেনা সদস্যদ সুদানে শান্তি মিশনে নিহত গ্রামের বাড়িতে দাফন, এলাকা জুড়ে শোকের মাতম মুরাদনগর মহিলা দলের সভাপতি আহত কাজী তাহমিনাকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন কায়কোবাদ মুরাদনগরে মহিলা দলের সভাপতির উপর পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ, হাসপাতালে দেখতে গেলেন বিএনপি’র নেতাকর্মী ত্রিশাল থানা পুলিশের অভিযানে অটোসহ চোর চক্রের ৩ জন আটক মিরপুর ছাতিয়ানে সার ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত কুমিল্লা-৯ ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ফুলবাড়িয়ায় মাদ্রাসাতুল মাদিনাহ্ ইসলামিক সেমিনার ও ক্রেস্ট প্রদান

কুষ্টিয়া কুমারখালীতে অবৈধভাবে জমির মাটি ভাটায় বিক্রি

Reporter Name / ১৫ Time View
Update : রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥
‘বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ ‘অনুযায়ী নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু কাটা নিষিদ্ধ। তবে এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে এক যুগেরও অধিক সময় ধরে পদ্মা নদীর মাটি ও বালু কেনাবেচা করছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের অন্তত ১২টি ইটভাটার মালিক, শ্রমিক ও কিছু অসাধু কৃষকরা। তাঁরা ইউনিয়নের মাজগ্রাম, ছোট মাজগ্রাম ও জুড়ালপুর এলাকার কয়েক শত বিঘা জমির মাটি প্রতিবছরে কোটি কোটি টাকায় কেনাবেচা করেন। তাঁদের ভাষ্য, জমি গুলো নিজ মালিকানাধীন। নদীর কারনে বছরে একবার ফসল হয়। এতে তেমন লাভ হয়না। সেজন্য ফসল চাষ না করে মাটি ও বালু ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। মান ভেদে প্রতিবিঘা জমি ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকায় কেনাবেচা হয়। প্রশাসন ও পরিবেশকে ম্যানেজ করেই তাঁরা প্রতিবছর এ কাজ করে চলেছেন।
তবে প্রতিবছর নদীর মাটি ও বালু কাটায় হুমকিতে পড়েছে হাজার হাজার বিঘা ফসলসহ কৃষি জমি ও পরিবেশ। ভারি যানবহনে ভেঙে গেছে গ্রামীণ সড়ক। প্রকাশ্যে এমন অবৈধ কর্মযজ্ঞ চললেও প্রশাসনের কোনো তৎপরতা না থাকায় অখুশি স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষক। তাঁরা দ্রুত নদীর মাটি ও বালু কাটা বন্ধের দাবি জানান। আর প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধভাবে নদী থেকে মাটি ও বালু কাটার কোনো সুযোগ নেই। দ্রুতই অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, এক যুগ আগেও পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রাম, ছোট মাজগ্রাম ও জুড়ালপুর এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমিতে বাদাম, সরিষা, মসুর, তিলসহ নানান জাতের ফসলের আবাদ করতেন কৃষকরা। কিন্তু ফসলের চেয়ে মাটি ও বালু বিক্রি অধিক লাভজনক হওয়ায় মাটি বিক্রি করছেন অনেকে। এতে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
আরো জানা গেছে, শিলাইদহ ইউনিয়নে বর্তমানে ১২টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ভাটায় প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০ লাখ পিস ইট তৈরি করা হয়। এই সব ইট তৈরি প্রধান কাঁচামাল মাটি ও বালু সংগ্রহ করা হয় পদ্মা নদী থেকে। এতে হুমকিতে পড়েছে হাজার হাজার বিঘা ফসলসহ কৃষি জমি ও পরিবেশ এবং গ্রামীণ সড়ক। গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন শিলাইদহ ইউনিয়নের মাজগ্রাম, ছোট মাজগ্রাম ও জুড়ালপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর পানি শুকিয়ে বিস্তীর্ণ চর জেগেছে। সেখানে সরিষা, মসুর, মটর, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে। এসব ফসলের পাশাপাশি অন্তত ৬টি ভেকু দিয়ে মাটি ও বালু কাটা হচ্ছে। বিভিন্ন যান দিয়ে মাটি ও বালু এসবিসি, এনএসবি, মাস্ট্রার্স ব্রিকসসহ বিভিন্ন ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। উঠে গেছে সড়কের কার্পেটিং। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে ভেকু রেখে মাটি ও বালু কাটা বন্ধ করে দ্রুত সটকে পড়েন চালক ও শ্রমিকরা।
 এ সময় নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, ‘ ওরে বাবা! আগে ধান, পাট, কুসোর ( আখ), বাদাম, মশুর কত ফসল হতো। এহন বছর বছর ভাটা হচ্ছে। মানুষ টাহার লোভে ভাটায় মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। একজনের কারনে সব কৃষকের সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা হলিও কথা কবার দেয়না। কলিই সমস্যা। আমরা চাই অবৈধ কাম বন্ধ হোক।’ মাজগ্রাম এলাকায় পদ্মনদীতে প্রায় পাঁচ বিঘা জমি আছে ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ার হোসেনের। তিনি বলেন, পানির কারনে ঠিকঠাক চাষ করা যায়না। আগে বছরে একবার চাষ হতো। এতে সংসার চলেনা। সেজন্য প্রতিবিঘা এক লাখ টাকা দরে ইটভাটায় বিক্রি করেছি। বন্যা আসলে আবার ভরাট হয়ে যাবে। একই কথা জানান উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক খাইরুল ইসলাম।  তাঁদের ভাষ্য, চাষাবাদের চেয়ে ভাটায় মাটি বিক্রিতে লাভ বেশি। প্রশাসন কোনো বাঁধা দেয়না।
জুড়ালপুর গ্রামের কৃষক কুদ্দুস আলী বলেন, আগে চরজুড়ে বাদাম, সরিষা, তিল, মসুরসহ হরেক রকম ফসল আবাদ হতো। কিন্তু সেখানে ভাটা বেশি হওয়ায় মাটির দাম ভালো। তাই অনেকেই ভাটায় মাটি বিক্রি করছেন। একটি ভাটায় বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাটি ব্যবহার হয় বলে জানিয়েছেন এসবিসি ইটভাটার মালিক মো. শাহিন। তিনি বলেন, এখানে অবৈধভাবে কিছু করা হয়না। জমির মালিকের কাছ থেকে টাকা দিয়ে মাটি কেনা হয়। মান ভেদে প্রতিবিঘা জমির দাম ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। এসব ঘটনা পরিবেশ ও প্রশাসনের লোকজন জানে। কৃষক আমির হোসেনের ভাষ্য, চাষাবাদ করলেই পদ্মার বুকে ভালো ফসল ফলানো সম্ভব। কিন্তু কিছু অসাধু ভাটা মালিক ও কৃষক আইন অমান্য করে বালু ও মাটি কেনাবেচা করছেন। দোষীদের শাস্তি হওয়া দরকার। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, সরকার কৃষির উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনাসহ নানা সুযোগের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ইটভাটার কারণে জমি ও উৎপাদন কমেছে। এ বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমদাদুল হককে বার বার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আখতার বলেন, বৈধ ইজারা ছাড়া নদীর মাটি ও বালু কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খুব দ্রুতই অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category